হঠাত্ করেই কোন সময় কলম টা নষ্ট হয়ে
গেলে ছেলেটা বলতোঃ
-বাবা ,টাকা লাগবে একটা ECONO DX কলম কিনতে
হবে ।আগের কলম টা নষ্ট হয়ে গেছে ।
,
বাবা টাকা দিতে পারতো না ।বরং কালি ফুরিয়ে যাওয়া
কলমের মাথা এনে নষ্ট কলমের মাথায় লাগিয়ে দিত।
দু তিন টা ঝাকি দিয়ে বলতোঃ
-এবার দেখ কালি বের হবে ।
,
ভয়ানক একটা ঘটনা ঘটত । তখন ঠিক মত কলম দিয়ে
কালি বের হত ।আবার চলত ছেলেটার সাদা পৃষ্ঠার
বুকে আচর কাটা ।
,
,
,
ছোট বেলায় যখন ছেলেটা তার বাবা কে বলতোঃ
-বাবা ,তের টা টাকা দিন তো ।একটা টেনিস বল কিনব ।
,
বাবা সম্ভাবত আকাশ থেকে পড়ত ছেলেটির কথা
শুনে ।তারপর বাবা বলতোঃ
,
-এক কেজি চাউলের দাম এগারো টাকা ।সেই চাউল
দিয়ে আমাদের কোন রকম একদিন চলে যাবে ।
তার থেকে চলো ,অন্য কিছু দিয়ে বল বানিয়ে
দেই ।
,
বাবা খুব যত্নে করে কাগজ দিয়ে বল বানিয়ে দিত ।
সারা দিন ঢেং ঢেং করে খেলতো সেই বল ।শুধু
টেনিশ বলের মত ড্রপ দিত না ।
,
,
,
খুব ইচ্ছা করতো ছেলেটার ,মিনা রাজুর ছবি
আঁকানো একটা স্কুল ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেতে ।
কিন্তু সামর্থ্য ছিল না ।তবুও তার বাবা কে বলেছিলঃ
,
বাবা ,আমার একটা ব্যাগ লাগবে ।ব্যাগে বই নিয়ে
স্কুলে যেতে খুব ইচ্ছা করে ।
,
প্রতিটি পিতা মাতাই চায় তার সন্তানের ইচ্ছাটা পূরন
করতে ।কিন্তু কপাল দোষে পারে না ।টাকা নেই ।
,
সবুজ কালারের একটা পলিথিন ব্যাগ ছেলেটির হাতে
ধরিয়ে দিয়ে বলেঃ
,
এই ব্যাগ টি সব থেকে ভালো ব্যাগ ।এটি রোদ
বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে ।বৃষ্টির দিনে পলিথিন ব্যাগ
করে বই নিলে বই বৃষ্টিতে ভিজে না ।
,
ছেলেটা মন দিয়ে কথা গুলো শুনতো ।বইয়ের
ভাজে ফেলে রাখতো পলিথিন ব্যাগ টা ।সময়
বোঝে ব্যবহার করতো ।
,
,
,
ছেলেটা বড় হয় ।সাধারন একটা কলেজে ভর্তি হয় ।
তবে দিন গুলো সেই আগের নিয়মের শিকলেই
বাঁধা থাকে ।
,
কলেজে যাতায়াত ভাড়া একদিন নিলে তারপরের দিন
আরে নেয়া হয় না ।পাঁচ টাকার রিক্সা ভাড়া বাঁচিয়ে সেই
রাস্তা টুকো পায়ে হেঁটে যাওয়া ।
,
তারপরের দিন বাঁচিয়ে রাখা টাকা দিয়ে আবার বাসে
করে কলেজে যাওয়া ।
,
ছোট বেলার একটা কিছুর আবদার করলে পিতা মাতা
অন্য কিছু দিয়ে সেই আবদার পূরন করে দিত ।আর
বড় হয়ে নিজেই সেই স্থানের দায়িত্ব পালন করা ।
,
,
,
পায়ে দেয়া চটি জোড়া ছিঁড়ে গেলে মুচির কাছে
নেয়া হয় না ।এখন নিজেই নিজের মনকে প্রবোধ
দেয়ঃ
,
-শুধু শুধু মুচি কে টাকা দিয়ে কি লাভ !নিজের কাজ টা
নিজেই করাই তো ভালো ।
,
সত্যি বলতে ছেলেটির পকেটে সেই পাঁচ টাকা
আছে কি না সন্দেহ ।তবুও মিথ্যা একটা আশ্রয় ধরে
রাখে ।
,
ছেলেটা অনেক কিছু দেখেছে ।এরা অনেক
কিছু দেখে ।অর্থের জন্য সব কিছু বদলে যায় ।
,
পূর্ণিমা রাতের জ্যোত্স্নার হাত ধরে নেমে আসা
ভালবাসা আমাবস্যার কালো অন্ধকারে হারিয়ে যায় ।খুব
সহজেই হারিয়ে যায় ।
,
পাশে বসে থাকা মানুষটির শক্ত করে ধরে রাখা হাতটি
এক সময় হালকা হয়ে আসে ।ছেড়ে দিয়ে অন্য
জনের হাত ধরে শক্ত করে ।
,
এই শ্রেণীর ছেলেদের জীবনে প্রেম
ভালবাসা চাওয়াটা সম্ভাবত ঠিক না ।স্থায়ি হয় না ।দমকা হাওয়ার
মত আসে আবার উড়ে চলে যায় ।
,
বগলের তলে ফাইল ভর্তি কাগজ পত্র নিয়ে এ
অফিস থেকে অন্য অফিস দৌড়ানো ।ছোট একটা
চাকরি ।কিন্তু পায় না ।
,
ছোট বেলার মত আজো হারাতে হয় ।দরিদ্রের
চাদর ঘিরে রেখেছে তার স্বপ্ন গুলো ,চাওয়া
গুলো ,আশা গুলো ।
,
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মত ঝন ঝন করে
স্বপ্ন গুলো ।পিতা মাতকে একটু সুখে রাখা ।
,
ছোট একটা চাকরি হবে ছেলেটার ।মাস শেষে
টাকা পেয়ে একটা শাড়ি কিনে আনবে মায়ের জন্য ।
,
আচ্ছা এই চাওয়া গুলোও অন্য কোন চাওয়া দিয়ে
পূরন করা যায় ??
,
না ,হয় না ।এই চাওয়ার অপশন শুধু একটাই ।যেটা ছাড়া ঐ
স্বপ্ন পূরন হয় না ।
Home »
» অভাব যেন চিরস্থায়ী
অভাব যেন চিরস্থায়ী
Related posts:
If you enjoyed this article just click here, or subscribe to receive more great content just like it.
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন